জেলা সৃষ্টির ইতিহাস
মহিমান্বিত অতীত ও গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যে ভাস্বর নরসিংদী জেলার রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। সুলতানি আমলের সুবর্ণবীথি এবং মুঘল আমলের মহেস্বরদী পরগণার অংশবিশেষের সমন্বয়ে নরসিংদী জেলার বর্তমান সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চলে নরসিংহপুর নামক ছোট নগর স্থাপন করেন। নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’ যুক্ত হয়ে নরসিংহদী নামের উৎপত্তি ঘটে। ‘নরসিংদী’ নামটি নরসিংহদীর পরিবর্তিত রূপ। জমিদারী প্রথা বিলোপের পর নরসিংদী প্রশাসনিকভাবে ঢাকা জেলাধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানায় পরিণত হয়। ১৯৭৭ সালে নরসিংদীকে ঢাকা জেলার একটি মহকুমায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮৪ সালে নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব এবং রায়পুরা-এ ০৬টি উপজেলা এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদী জেলা ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় নরসিংদী জেলার যাত্রা।
নামকরণ
পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাজা নরসিংহ কর্তৃক প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চলে নরসিংহপুর নগর স্থাপিত হয়। নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’ যুক্ত হয়ে নরসিংহদী নামের উৎপত্তি ঘটে। নরসিংহদী নামের পরিবর্তিতরূপে বর্তমান ‘নরসিংদী’ জেলার নামকরণ করা হয়।
ভৌগলিক অবস্থান
অবস্থান: নরসিংদী জেলা ২৩°৪৬' উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪°১৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০°৬০' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
আয়তন: ১১১৪ বর্গ কি:মি:
সীমানা: নরসিংদী জেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দক্ষিণে নারায়্ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পশ্চিমে গাজীপুর জেলা অবস্থিত।
সীমান্তবর্তী জেলা সমূহ: কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়্ণগঞ্জ এবং গাজীপুর।
ভূপ্রকৃতি: নরসিংদী জেলা মূলত মেঘনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বিধৌত প্লাবন সমভূমির অংশ। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে মধুপুর গড়ের সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্লাইস্টোসিন যুগের সোপান পরিলক্ষিত হয়।
প্রধান নদ-নদী: মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া, পাহাড়িয়া নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ।
জলবায়ু: নরসিংদী জেলার জলবায়ু সমভাবাপন্ন ও নাতিশীতোষ্ণ। ঋতুভেদে আর্দ্রতার পরিবর্তনের সাথে সাথে জেলার আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়।
জীববৈচিত্র্য: নরসিংদী জেলায় কোন প্রাকৃতিক বনভূমি না থাকায় বন্যপ্রাণির সংখ্যাও কম। তবে গৃহপালিত প্রাণির পাশাপাশি বানর, শেয়াল, ময়ূর, বনমোরগসহ নানা ধরণের পাখ-পাখালির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।
প্রশাসনিক তথ্য
জনসংখ্যা : ২২,২৪,৯৪৪ জন (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)
শিক্ষার হার : ৭৫% (ব্যানবেইস ২০১৭ এর তথ্যানুযায়ী)
সংসদীয় আসন সংখ্যা : ০৫ (পাঁচ) টি
নির্বাচনী এলাকা/ সংসদীয় আসন |
সাংসদের নাম |
ফোন ও ই-মেইল |
মন্তব্য (কোন দপ্তরেরর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কি না/ সাংসদীয় কোন স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কি না) |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
নরসিংদী-১ (নরসিংদী সদর) |
|
|
|
নরসিংদী-২ (পলাশ) |
|
|
|
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) |
|
|
|
নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) |
|
|
|
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) |
|
|
|
উপজেলা: ০৬ (ছয়) টি
উপজেলার নাম |
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম |
মোবাইল |
ই-মেইল |
নরসিংদী সদর |
|
|
|
শিবপুর |
|
|
|
রায়পুরা |
|
|
|
বেলাব |
|
|
|
মনোহরদী |
|
|
|
পলাশ |
|
|
|
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ০৬ (ছয়) টি
পৌরসভা: ০৬ (ছয়) টি
ইউনিয়ন পরিষদ: ৭১ (একাত্তর) টি
আবাসন/ আশ্রয়ণ প্রকল্প: ০৫ টি (২৮০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে)
আদর্শ গ্রাম: ১১ টি (২৩২ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে)
স্কুলের সংখ্যা:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৭৭৩ টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ২৪১ টি
কলেজের সংখ্যা: ৬৩ টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা: নেই
মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা: নেই
জেনারেল হাসপাতালের সংখ্যা: সরকারি হাসপাতাল ৭ টি (৫ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ)
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
তাঁতশিল্প: নরসিংদী জেলা তাঁতশিল্পের সূতিকাগার হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। তাঁতশিল্পের মাধ্যমে অসংখ্য লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা জেলার অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে নরসিংদী জেলায় ১০,০০০-১২,০০০ হস্তচালিত তাঁত এবং ৭০,০০০-৮০,০০০ পাওয়ার লুম রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে শেখেরচর (বাবুরহাট) এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ তাঁতবস্ত্র বিপণন কেন্দ্র। ১৭১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি চলমান ব্যবসায়ের কৌলিণ্য এই বিপণন তীর্থকে পরিচিতি দিয়েছে ‘প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার’ হিসেবে।
কৃষিপণ্য: শিল্পসমৃদ্ধ নরসিংদী জেলা কৃষিক্ষেত্রেও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নরসিংদী জেলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল (শিবপুর ও বেলাব উপজেলা) লটকন চাষের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া মনোহরদীর কলা, শিবপুরের কলম্বো লেবু ও রাবানের (পলাশ উপজেলা) আনারসের দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
নরসিংদী জেলার রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে নরসিংদী শহরের প্রবেশমুখ পাঁচদোনা নামক স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ক্রমান্বয়ে জনগণের অংশগ্রহণের ফলে প্রারম্ভিক প্রতিরোধযুদ্ধ গণযুদ্ধে পরিণত হয়। সুদীর্ঘ নয় মাসব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য প্রতিরোধযুদ্ধ সংঘটিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে নরসিংদী সদর ব্যতীত সকল এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। অবশেষে ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানি বাহিনীর পশ্চাদপসরণের মাধ্যমে নরসিংদী জেলা হানাদারমুক্ত হয়।
দর্শনীয় স্থান
উয়ারী-বটেশ্বর: নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে নিবিড় অনুসন্ধান ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গনগরী। নরসিংদী শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে বেলাব উপজেলার মরজাল বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে উয়ারী-বটেশ্বর এর অবস্থান।
চিনাদী বিল: শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের মানিকদী, শিমুলিয়া, দুলালপুর, ভিটি চিনাদী ও দরগারবন্দ- এ পাঁচটি গ্রামের মিলনস্থলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত চিনাদী বিলের অবস্থান। প্রায় ৫৫০ (পাঁচশত পঞ্চাশ) বিঘা আয়তনের স্বচ্ছ পানির এ বিলটি শিবপুর উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নীল আকাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের আধার চিনাদী বিল জুড়ে রয়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁসসহ অসংখ্য পাখ-পাখালির বিচরণ।
সোনাইমুড়ি টেক: শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া বাজারের পাশেই সোনাইমুড়ি টেক অবস্থিত। প্লাইস্টোসিন যুগের সোপান অঞ্চলের অন্তর্গত লাল মাটির টিলা এবং তাঁর পাদদেশে অবস্থিত সবুজঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি: পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নে অবস্থিত। বাড়িটি বর্তমানে একটি সংগ্রহশালা হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
বালাপুর জমিদার বাড়ি: নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নে জমিদার নবীনচন্দ্র সাহার বাড়িটি বালাপুর জমিদার বাড়ি নামে খ্যাত। মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৩২০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি একটি একতলা, একটি দো-তলা এবং একটি তিনতলা ভবনবিশিষ্ট।
ড্রিম হলিডে পার্ক: নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের চৈতাবতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ১৮.২১১৯ একর জমির উপর ড্রিম হলিডে পার্ক গড়ে উঠেছে। পার্কটি ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জনসাধারণের নিকট শিশু বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত।
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্মৃতি পাঠাগার: নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রামনগর (বর্তমানে মতিউরনগর) গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্মৃতি পাঠাগার অবস্থিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী এই বীরের জন্মস্থানে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও সকলের জন্য উন্মুক্ত।
বিশেষ উৎসব: আবহমান বাংলার চিরায়ত উৎসবসমূহ ব্যতীত বিশেষ কোন উৎসব উদযাপিত হয় না।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী: নরসিংদী জেলায় স্থায়ীভাবে কোন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস নেই।
বাংলাদেশের মানচিত্রে নিজ জেলা
ঢাকা বিভাগের মানচিত্রে নিজ জেলা
নিজ জেলার মানচিত্র
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস